জেএসসির ভালো ফল তিন কারণে

আইএনবি নিউজ: জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষায় সব সূচকে ভাল করলেও প্রাথমিক সমাপনীতে (পিইসি) খারাপ ফল করেছে ক্ষুদে পরীক্ষার্থীরা। জেএসসিতে পাসের হার বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা। একই সঙ্গে শূন্য পাস করার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যেমন কমেছে তেমননি শতভাগ পাস করার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে। তবে প্রাথমিক সমাপনীতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যাও দুটিই কমেছে।

শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে ভাল বলতে যা বুঝায় এবারের জেএসসি-জেডিসি দুই সমাপনীতে সেটি হয়েছে। সিলেট শিক্ষাবোর্ডের পাসের হার গত বছরের তুলনায় এবার ১২ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়েছে। এটি সার্বিক পাসের হার উপর প্রভাব পড়েছে। গণিত, ইংরেজিতে ভাল করায় এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্তি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। অন্যদিকে পাসের হার ও জিপিএ-৫ সংখ্যা দুটিই কমেছে প্রাথমিক সমাপনীতে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর পাসের হার কমেছে ২ দশমিক ০৯ ভাগ এবং জিপিএ-৫ কমেছে ৩০ হাজার ২২৮টি। এ কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় চলতি বছর এমসিকিউ তুলে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ শতভাগ এমসিকিউ মুক্ত পরীক্ষা হয়েছে। এছাড়াও এক উপজেলার খাতা অন্য উপজেলার শিক্ষকদের দিয়ে মূল্যায়ণ করা হয়েছে। এ দুটি কারণে চলতি বছর সমাপনীর ফলাফল খারাপ হয়েছে।

বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর প্রথমবারের মতো পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন করে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। প্রত্যেকটি বোর্ডে গত বছরের পাসের হার আর চলতি বছরের পাসের হার প্রায় কাছাকাছি। ব্যতিক্রম ছিল শুধু সিলেট শিক্ষাবোর্ড। এ বোর্ডে গত বছর পাসের হার ছিল ৭৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, চলতি বছর পাস করেছে ৯২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার বেড়েছে ১২ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যে কারণে সার্বিক পাসের হারের শতাংশ বেড়েছে।

এ ব্যাপারে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মজিবুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার্থীরা ইংরেজি ও গণিতের ভাল করায় গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার বেড়েছে। তিনি বলেন, গত বছরের পাসের হার কমার কারণ অনুসন্ধান করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে ইংরেজি, গণিতে শিক্ষার্থীদের ভাল করে মনযোগ দেয়ার জন্য বলা হয়। সেটি কাজে লেগেছে বলে মনে করেন এ বোর্ড চেয়ারম্যান।
তবে পাসের হারের দিকে থেকে দেশের বড় দুটি বোর্ড ঢাকা ও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড খারাপ ফলাফল করেছে। এর ব্যাখ্যা দিয়ে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জিয়াউল হক বলেন, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পাসের হার কমার অন্যতম কারণ জেলা পর্যায়ে পাসের হার কমে যাওয়া। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর বাদে অন্যান্য জেলাগুলো মোট পাসের হার ৭০ শতাংশ যা পুরো বোর্ডের ফলাফলের উপর প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে ফলে উন্নতি হলেও পেছনের সারিতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বাড়লেও দেশের শিক্ষাবোর্ডগুলোর মধ্যে এবার পিছনের সারিতে চট্টগ্রাম। তিন পার্বত্য জেলায় পাসের হার কম হওয়ায় এবং এক বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ায় সার্বিক ফলাফলে এই প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টদের।

এবারের ফলাফলে বরিশাল বোর্ডে সবচেয়ে বেশি ৯৭ দশমিক ০৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে; ঢাকা বোর্ডে পাসের হার সবচেয়ে কম ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ। চট্টগ্রামের অবস্থান ঢাকার ঠিক আগে। ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুটোই গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। অন্য বোর্ডের তুলনায় পিছিয়ে থাকার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “তিনটি পার্বত্য জেলার কারণে পাশের হারে বোর্ড পিছিয়ে পড়ে। ওই তিন জেলায় পাশের হার কম। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, পাহাড়ের জনগোষ্ঠী একটু পিছিয়ে পড়া। তাদের আরো পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা দরকার। এখন তাদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি সুফল মিলবে।
পিইসি ও ইবতেদায়ীতে ফল বিপর্যয়:
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এবার ফল বিপর্যয় হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা দুটিই কমেছে। চলতি বছর পিইসি পরীক্ষায় পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫০ ভাগ। গত বছর পাসের হার ছিল ৯৭ দশমিক ৫৯। অর্থাৎ পাসের হার কমেছে ২ দশমিক ০৯ ভাগ। চলতি বছর প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৯৬৫ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৮৮ জন শিক্ষার্থী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনীতে ১১ হাজার ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। গত বছর সমাপনীতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৯৩ জন পরীক্ষার্থী। এবার জিপিএ-৫ কমেছে ৩০ হাজার ২২৮ জন পরীক্ষার্থী।
পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ হওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর খাতা মূল্যায়নে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। তারমধ্যে এক উপজেলা খাতা অন্য উপজেলা দিয়ে মূল্যায়ণ করানো হয়েছে। খাতা মূল্যায়নে স্বজনপ্রীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছর থেকে এটি বাস্তবায়ন করা হয়। এছাড়াও চলতি বছর শতভাগ এমসিকিউ মুক্ত পরীক্ষা হওয়ার কারনে ফলাফলে একটা ধাক্কা লেগেছে।

সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমে যাওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এফ এম মঞ্জুর কাদির বলেন, ‘পাসের হার ক্রমান্বয়ে বাড়বে না। তাহলে তো ১০০ ক্রস করে যাবে। কখনও কমবে কখনও বাড়বে। প্রশ্ন হয়তো এবার সেভাবেই হয়েছে যার ফলে পাস কমে এসেছে। এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন) তুলে দেওয়া হয়েছে, এর একটা প্রভাব থাকতে পারে। তবে পাসের হার ৯৫ এর নিচে নামেনি। প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন বলেন, ‘সব বছর তো পাসের হার এক রকম থাকবে না। এবার আমরা সুন্দরভাবে পরীক্ষা নিয়েছি, পরীক্ষায় কোনো দুর্নীতি করতে দেইনি, ইত্যাদি কারণে হয়তো পরীক্ষা সঠিকভাবে হয়েছে। কিছুটা সুন্দর মূল্যায়ন হয়েছে হয়তোবা, এটাই হয়তো (ফল খারাপ হওয়ার) কারণ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, ‘আগে যে উপজেলার খাতা সেই উপজেলায় দেখা হতো। এবার আমরা পরিবর্তন করে দিয়েছি। মূল্যায়ন পদ্ধতির কারণে হয়তো কিছুটা কমতে পারে।

আইএনবি/এনএম