চালের বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতার আভাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বিশ্বের শীর্ষ চাল রপ্তানিকারী দেশ ভারত রপ্তানি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের পর থেকে অস্থিরতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে বৈশ্বিক চালের বাজারে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভারত এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর শুক্রবার ক্রেতাদের সঙ্গে  চাল বেচা-কেনা সংক্রান্ত নতুন কোনো চুক্তি হয়নি এশিয়া, বিশেষ করে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে।

সিঙ্গাপুর ভিত্তিক একটি চাল রপ্তানিকারক সংস্থার মালিক রয়টার্সকে বলেন, ‘শিগগিরই চালের দাম বাড়তে শুরু করবে। আমরা আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে প্রতি টন চালের দাম অন্তত ৫০ ডলার বাড়বে এবং অল্প সময়ের মধ্যে তা ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’

প্রতিদিন বৈশ্বিক বাজারে যে পরিমাণ চাল বেচাকেনা হয়, তার ৪০ শতাংশ সরবরাহ আসে ভারত থেকে। বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আবহাওয়াগত কারণে চালের উৎপাদন কম হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাসমতি ছাড়া অন্য সব চালের রপ্তানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ভারতের এই সিদ্ধান্ত জানানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, অর্থাৎ শুক্রবার থেকেই চালের দাম বৃদ্ধির আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের প্রায় সব রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান নতুন চালানের অর্ডার নেওয়া বন্ধ রেখেছেন বলে জানা গেছে।

এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে সিঙ্গাপুরের ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা সবাই সামনের দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি; বোঝার চেষ্টা করছি— চালের দাম কী পরিমাণে বাড়তে পারে।’

সিঙ্গাপুরের আরেক রপ্তানিকারী ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার সংস্থা আজ কোনো বায়ারের সঙ্গে (চাল বিক্রি সংক্রান্ত) কোনো চুক্তি করেনি। অন্য সংস্থার খবর আমি জানি না।’

‘তবে আমি বলব, যেহেতু ভারত থেকে চাল আসা বন্ধ হয়ে গেছে— সামনের দিনগুলোতে বায়ারদের (চাল ক্রয় বাবদ) আরও বেশি অর্থ ব্যয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত।’

থাইল্যান্ডের চাল রপ্তানিকারকদের সংস্থা থাই রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিশেনের প্রেসিডেন্ট সুকিয়াত ওফাসওয়াংসে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের রপ্তানিকারকরা এই মুহূর্তে চাল বিক্রি করতে চাইছেন না। কারণ অনেক রপ্তানিকারকের ধারণা, সামনের দিনে প্রতি টন চালের দাম ৭০০ থেকে ৮০০ ডলারে উঠবে।’

চাল বিশ্বের একমাত্র প্রধান খাদ্যশস্য, যেটি উৎপাদনের জন্য নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া ও মৌসুমী বৃষ্টিপাত অপরিহার্য। প্রতি বছর বিশ্বে যে পরিমাণ চালের উৎপাদন হয়, তার ৯০ ভাগই হয় এশিয়ার বৃষ্টিবহুল অঞ্চলগুলোতে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম এই মুহূর্তে চাল উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষে থাকা ৬টি দেশ। কিন্তু এল নিনো ধাঁচের আবহাওয়া, অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, খরাসহ বিভিন্ন কারণে গত বছর চালের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। বাজারে বর্তমানে চালের যে দাম, তা ইতোমধ্যে গত ১১ বছরের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।

আইএনবি/এনএ