ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল নিয়ে উভয় সংকট

আইএনবি ডেস্ক: ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে উভয় সংকট তৈরি হয়েছে। ঈদুল আজহার সাত দিন মহাসড়কে এ বাহন এক রকম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর কারণ বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা। অন্যদিকে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন মোটরসাইকেল চালকরা। তাদের মতে, মোটরসাইকেল না চললে পরিবহনের সংকট দেখা দেবে; মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। এ কারণে ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি চান তারা।

গত রবিবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভায় ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা রোধে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। পরের দিন সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষও (বিআরটিএ) একই সিদ্ধান্ত নেয়। সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, সবার কল্যাণে মোটরসাইকেল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। গত ঈদে মোটরসাইকেলে যানজট কমলেও শত শত মানুষ হতাহত হয়েছেন।

বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেছেন, মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি চার চাকার গাড়ির তুলনায় ৩০ গুণ বেশি। মোটরসাইকেলকে একটি বিপজ্জনক ও অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ বাহন আখ্যা দিয়ে ড. হাদীউজ্জামান বলেন, মোটরসাইকেল কখনই গণপরিবহনের বিকল্প নয়। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা হলো, ঈদযাত্রায় এক কোটি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত গণপরিবহন নেই।

মানববন্ধনে মোটরসাইকেল চালকরা বলেন, ঈদুল ফিতরের যাত্রা স্বস্তির হয়েছিল মোটরসাইকেলের কারণেই। মোটরসাইকেল বন্ধ হলে ফিটনেসবিহীন গাড়ি যাত্রী পরিবহনে নামবে। এতে দুর্ঘটনা ও যানজট বাড়বে। তারা জানান, গত ঈদে ২০ লাখ মোটরসাইকেলে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়েন। মোটরসাইকেল বন্ধ হলে এ ৩০ লাখ মানুষ কীভাবে বাড়ি যাবে? এত বাস কি আছে? তার মানে সংকট নিরসনে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ঈদযাত্রায় নামবে।

জানা গেছে, পুলিশের অনুমতিতে জরুরি প্রয়োজনে ৭ থেকে ১৩ জুলাই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মোটরসাইকেলে যাওয়া যাবে। এ ‘সুযোগকে’ ঘুষ বাণিজ্যের লাইসেন্স বলছেন মোটরসাইকেল চালকরা।

একই আশঙ্কার কথা বলেছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি জানান, রাইডশেয়ারিংয়ের সঠিক ডাটা নেই। এখন কাগজ চেকিংয়ের নামে মহাসড়কে নৈরাজ্য হবে। অনেক চালক তা এড়াতে দ্রুত গাড়ি চালাবে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বেঠকে অংশ নেওয়া মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দুর্ঘটনা বাড়ালেও মোটরসাইকেলের কারণে গত ঈদযাত্রা স্বস্তির ছিল। গণপরিবহনে যাত্রীর চাপ কম ছিল।

সওজ এবং বিআরটিএ দুর্ঘটনা রোধে ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল বন্ধের প্রস্তাব করে। তার ধারণা, গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের এ প্রস্তাবে সমর্থন রয়েছে। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল চলাচলে নিরুৎসাহিত করা হবে। কিন্তু পরে বলা হয়, মোটরসাইকেল চলাচলই বন্ধ।

বিআরটিএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারাদেশে নিবন্ধিত ৫৩ লাখ ৫ হাজার ৯৩৬টি যানবাহনের মধ্যে ৩৭ লাখ ৫৩ হাজার ২১৮টি মোটরসাইকেল। মোট যানবাহনের ৭১ শতাংশই মোটরসাইকেল। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ২ লাখ ৯২ হাজার ২৮টি নতুন যানবাহন নিবন্ধন পেয়েছেন। যার ২ লাখ ৫২ হাজার ২৩৩টি বা ৮৭ শতাংশই মোটরসাইকেল। রাজধানীতে নিবন্ধিত ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৮৭৪টি যানবাহনের অর্ধেকের বেশি মোটরসাইকেল।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে চলতি বছর সড়কে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার ৪২ শতাংশ মারা গেছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিকল্প ব্যবস্থা করে মোটরসাইকেল বন্ধ করলে সঠিক সিদ্ধান্ত মনে হতো। ঈদের আগে-পরে ৭ দিন মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের সরকারি নির্দেশনা কীভাবে কার্যকর করা হবে, তাও স্পষ্ট নয়। ‘যৌক্তিক’ প্রয়োজনে মোটরসাইকেলে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়ার অনুমতি হাইওয়ে পুলিশের কাছ থেকে কীভাবে মিলবে, তাও পরিষ্কার নয়।

ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের বিরোধীদের অভিযোগ, পরিবহন নেতাদের চাপে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর পরিবহন নেতারা বলছেন, তারা চাপ দেওয়া দূরে থাক, মোটরসাইকেল বন্ধের দাবি কিংবা প্রস্তাব, কিছুই করেননি। সরকারি সংস্থাগুলোর ভাষ্য, দুর্ঘটনা রোধেই মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
সূত্র: আমাদের সময়

আইএনবি/বিভূঁইয়া