ভোট বিলম্ব মানবে না বিএনপি

আইএনবি ডেস্ক:কোনো অনাকাক্সিক্ষত ইস্যু তৈরি করে নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রচেষ্টাকে যে কোনো মূল্যে প্রতিহত করবে বিএনপি।

দেশের বর্তমান অভ্যন্তরীণ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পর্ক রাখা রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষেই সম্ভব। আগামী নির্বাচনে কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীকে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ আনুকূল্য প্রদান করা হলে ব্যর্থ হবে জুলাই বিপ্লব। সে কারণে ভোট নিয়ে কোনো ধরনের বিলম্ব মানবে না বিএনপি।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জুলাই গণ অভ্যুথানের ঘোষণাপত্র, সংবিধান, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা, স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ একগুচ্ছ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক শেষ হয় ১০টা ৪৫ মিনিটে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে অংশ নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাত্ররা কী ঘোষণা দেবে? সরকার প্রথমে বলল, ঘোষণাপত্রের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা ছাত্রদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা ঘোষণাপত্র তৈরির দায়িত্ব নিল। তাঁরা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সংবিধান বাতিল করার ম্যান্ডেট কে দিয়েছে? সংবিধানের বাইরে গেলে দেশে আবারও অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে। ফলে সংবিধানের আলোকেই সরকারকে সবকিছু বিবেচনা করতে হবে।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাড়ে সাত বছর পর বিদেশসফর ও সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়।

স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা করানো থেকে শুরু থেকেই বাধা দিয়েছে। বিদেশে চিকিৎসা শেষে দেশ ও জনগণের মাঝে তিনি ফিরে আসবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তাঁরা।

তাঁরা বলেন, ’৭২ সালের সংবিধানের আলোকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনসহ দেশের সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান সংবিধান বাতিলের কথা যারা বলছে, তাদের পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। সরকারের কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারে মনে করেন বৈঠকে অংশ নেওয়া কোনো কোনো নেতা।

তাঁদের মতে, এর আগে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের অপসারণ ইস্যুতে এই চক্রটি দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছিল। এদের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোসহ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও ভোটার হওয়ার সবনিম্ন বয়স ১৭ বছর হওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। এতে বেশ কয়েকজন সদস্য বলেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর। উপমহাদেশে বাংলাদেশের প্রতিবেশী সব দেশেই ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ বছর। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপে ১৮ বছরের আগে কেউ ভোট দিতে পারে না। তখন দুইজন সদস্য বলেন, দেখা যাবে আগামী দিনে কেউ একজন এসে বলবে ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৬ বছর। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই সাবালক ধরা হয় ১৮ বছর থেকে। ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়সসীমা বদলানোর কোনো দরকার নেই। ১৮ বছরে ভোটার বাংলাদেশের শুরু থেকেই চলে আসছে। যারা বদলানোর কথা বলছে, তাদের ভিন্ন দুরভিসন্ধি রয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কেন আয়োজন করতে চাইছে। অতীতে কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো তা করেনি? এর পেছনে উদ্দেশ্য কী?

দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ওই বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে। বৈঠকে অংশ নিয়ে দুইজন সদস্য বলেন, দেশের জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫ সালের শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অথবা প্রয়োজন আরও ছয় মাস বাড়ানোর কথা বলেছে। এই কথার কোনো অর্থ নাই। কেন জানি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে। দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চাই। নির্বাচন পেছাতে সরকারের ওপর ছাত্ররাও চাপ দিতে পারে বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেন।

তাঁদের মতে, এতে ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে কিছুটা সময় পাবে। আবার সরকারের কেউ কেউ এই নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে সহায়তা করছে।

তাঁরা মনে করেন, দেশের প্রধান ইস্যু নির্বাচন, ভোটের অধিকার আর গণতন্ত্রের পথকে আরও বিলম্বিত করতে একটার পর একটা ইস্যু সৃষ্টি করা হচ্ছে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীর বিক্রম), ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

আইএনবি/বিভূঁইয়া