খুলনায় ওসির বিরুদ্ধে ঘের ব্যবসায়ীর ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

খুলনা প্রতিনিধি:খুলনার কয়রা থানার ওসি মো. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে শতাধিক বিঘা জমির চিংড়ি ঘের দখল করে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ওই চিংড়ি ঘের নিজের দখলে রেখে এ টাকা আত্মসাত করেছেন তিনি।

বুধবার (১০ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমন অভিযোগ করেছেন উপজেলার ২ নম্বর কয়রা গ্রামের মৃত নেছার আলী সানার ছেলে শাহবাজ হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, উপজেলার মঠবাড়ি মৌজায় নিজের ৯ বিঘা জমিসহ অন্যের জমি লিজ নিয়ে প্রায় ১১২ বিঘা জমিতে চিংড়ি ঘের করেন তিনি। ওই চিংড়ি ঘেরের জমি নিয়ে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে বিরোধের জেরে আদালতে মামলা হয়। এ সুযোগে ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি থানায় মিমাংসার কথা বলে শাহবাজ ও অন্যান্য জমি মালিকদের ডেকে নেওয়া হয়। এ সময় কয়রা থানার ওসির কক্ষে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

দীর্ঘক্ষণ জমির বিরোধ নিয়ে আলোচনা শেষে আদালতে চলমান মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চিংড়ি ঘেরটি ওসি নিজের জিম্মায় রাখার প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঘেরের চিংড়ি বিক্রির টাকা ওসির কাছে জমা থাকবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। এসব সিদ্ধান্ত ছিল মৌখিক।

পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে শাহবাজসহ জমি মালিকদের অনুকূলে রায় প্রকাশিত হয়। আদালতের আদেশের কপি নিয়ে ওসির কাছে ঘের ও ঘেরের চিংড়ি বিক্রির টাকা চাইতে গেলে নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন তিনি। সেই থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ঘেরটি ওসি নিজের দখলে রেখে ৩০ লাখ টাকারও বেশি আত্মসাত করেছেন বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিল্লাল গাজী নামে একজন জমি মালিক অভিযোগ করেন, আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে চিংড়ি ঘেরটি দীর্ঘ দিন ধরে ওসির দখলে রয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু আজও ঘেরের দখল ছাড়েননি তিনি।

শাহবাজ হোসেন বলেন, যে সময় কয়রা থানার ওসি মিজানুর তার কাছ থেকে চিংড়ি ঘেরটি দখলে নেন, সে সময় ঘেরে ৩০ লাখ টাকারও বেশি চিংড়ি ছিল। সেসব চিংড়ি ধরে তিনি স্থানীয় আড়তে বিক্রি করেছেন। যার একাধিক প্রমাণ রয়েছে। টাকা ও মাছের লোভে ওসি ঘেরের দখল ছাড়তে চাইছেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

জানতে চাইলে কয়রা থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, তিনি কখনও ওই চিংড়ি ঘের দখলে নেননি। মূলত ঘেরটি নিয়ে স্থানীয় দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ থাকা এবং আদালতে মামলা চলমান থাকায় জমির মূল মালিকদের দখলে আছে। সেখান থেকে টাকা আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেন তিনি।

এর আগে চলতি মাসের ৪ জুলাই উপজেলার পল্লী মঙ্গল বাজারের ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা সানাকে থানায় ডেকে নিয়ে মারধরের অভিযোগ ওঠে ওসির বিরুদ্ধে। ওই ব্যবসায়ী খুলনা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, থানার একজন এসআই ও কনস্টেবল তার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে না করায় পুলিশ ওই ব্যবসায়ীর ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে তাকে শাসিয়ে চলে যান। পরে কয়রা থানার ওসি মিজানুর রহমান স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের মাধ্যমে ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফাকে তার কক্ষে ডেকে এনে মারধরসহ ক্রস ফায়ারের হুমকি দেন বলে জানা যায়।

আইএনবি/বিভূঁইয়া