প্রযুক্তি ডেস্ক: খরচ না চালাতে পেরে দেশ-মহাদেশের চার মহাকাশ সংস্থার টাকায় তৈরী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটি সমুদ্রে ফেলে দেয়া হবে। এমনই মত দিয়েছেন এতে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা। জানা যায়, নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইসা), জাপান স্পেস এজেন্সি (জাক্সা), রুশ মহাকাশ সংস্থা ও কানাডার মহাকাশ সংস্থার (সিএসএ) মিলে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠিয়েছিলো আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটি। এরপর থেকে ওই মহাকাশ স্টেশনটি হয়ে ওঠে বিজ্ঞানীদের গবেষণার অন্যতম ল্যাবরেটরি। প্রোটিন, অণুজীব, ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে সেখানে গবেষণা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। মাইক্রোগ্র্যাভিটিই ওই সব গবেষণার আদর্শ পরিবেশ। যেখানে বায়ুমণ্ডল নেই। নেই পৃথিবীর জোরালো অভিকর্ষ বল। তাই বিভিন্ন ওষুধ আবিষ্কারেরও আদর্শ জায়গা আন্তর্জাতিক এই মহাকাশ স্টেশন। ইত্তেফাক
ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ওপরে পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা এই মহাকাশ স্টেশনকে সাগরে ফেলে দিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন স্থায়ীভাবে চাঁদের বুকে গড়তে চাইছেন একটি আদর্শ গবেষণাগার। ৩ লাখ ৮৪ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চাঁদের ওপর আস্থা রাখতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। ‘লুনার স্টেশন’ নামে সেটির নামও ঠিক করে ফেলেছেন তারা। আর এ প্রকল্পের নাম ‘আর্টেমিস’। পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা মহাকাশ স্টেশনটি মূলত সূর্যশক্তিকে কাজে লাগায়। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মহাকাশে রয়েছে স্টেশনটি। এই দুই দশকে এটি গড়ে দিয়েছে সভ্যতার উজ্জ্বল ইতিহাস। এটির যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৯৮৪ সালে। স্টেট অব দ্য ইউনিয়, ভাষণে তদানন্তীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান মহাকাশ স্টেশন বানানোর জন্য নাসাকে ১০ বছর সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। তখন বিপুল খরচের কথা মাথায় রেখে এই প্রকল্পে রাশিয়া (তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন), জাপান ও কানাডাকে রাখা হয়েছিলো। ইউরোপ মহাদেশের মহাকাশ সংস্থা ‘ইসা’কেও রাখার সিদ্ধান্ত হয় তাতে।
১৯৯৮-এর ২০ নভেম্বর মহাকাশ স্টেশনের রশদ নিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথে পাড়ি জমায় রুশ রকেট, জারিয়া। এর ১৫ দিন পরই ৪ ডিসেম্বর রওনা হয় মার্কিন স্পেস শাটলও। ২০০০ সালে মহাকাশচারীরা প্রথম মহাকাশ স্টেশনে পা রাখলেন। স্টেশনে থেকে গবেষণা চালানোর জন্য রওনা হলেন ৩ মহাকাশচারী। এদের ২ জন রুশ, ১ মার্কিন।
কিন্তু পুরোদস্তুর গবেষণার জন্য প্রয়োজন ছিলো একটি গবেষণাগার। সেটি বানালো আমেরিকা। নাম,ডেস্টিনি। মহাকাশ স্টেশনে তা পাঠানো হলো ২০০১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। ডেস্টিনি এখনো আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে মার্কিন মহাকাশ গবেষণার, ফার্স্ট অ্যান্ড লাস্ট ডেস্টিনেশন। পরে সেখানেই আমেরিকা গড়ে তুলেছে মহাকাশে তাদের জাতীয় গ্রন্থাগারটি, ২০০৫-এ মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনের পর।
মহাকাশ গবেষণা স্টেশনটি দেড় ঘণ্টায় একবার করে প্রদক্ষিণ করছে পৃথিবীকে। দিনে পৃথিবীকে প্রায় সাড়ে ১৫টি কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে চলেছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র। গৌতম বলেন, অচল হয়ে পড়লেও মহাকাশ কেন্দ্রটির এই প্রদক্ষিণ চলতে পারে অনন্তকাল। তবে তাতে অন্য মহাকাশযান পাঠাতে অসুবিধা হতে পারে। তাদের আসা-যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে মহাকাশ কেন্দ্র। এটি তখন আবর্জনা (স্পেস ডেব্রি) বাড়াতে পারে মহাকাশে। তাই তাকে নামিয়ে আনাটাই জরুরি। সেটা পাঁচ বছরের মধ্যে যদি না হয়, তা হলে তা অবশ্যই হবে ২০৩০-এর মধ্যে করতে হবে। হয়তো প্রশান্ত মহাসাগরেই নামিয়ে ফেলা হবে তাকে। তত দিনে চাঁদের কক্ষপথে পাকাপাকিভাবে আস্তানা (আর্টেমিস) গড়ে তুলতে পারবে নাসা। আর মহাকাশ স্টেশনটির ‘শান্তির নির্বাণ’ হবে প্রশান্ত মহাসাগর।
আইএনবি/বিভূঁইয়া